পুলিশ ও আদি একদিন
প্রকৌশলী ফাহিম মাহমুদ
পৃথিবীর প্রতিটা উপাদান একট আরেকটির সাথে শত্র“টা লেগেই থাকে। কেউ কাউকে বিন্দু মাত্র ছাড় দিতে রাজি নয়, প্রয়োজনে লোকসান হোক অল্প অথবা সিংহ অংশ। যেমন তেলের সাথে জল, বিড়ালের সাথে কুকুর, বাঘের সাথে হরিণের, মানুষের সাথে মানুষের শত্র“তা। হয়ত সব ঠিক আছে কিন্তু বাঘের সাথে হরিণের কিভাবে শত্র“তা তা মেলাতে পারছেন না। পারার ও কথা না। বাঘ ও হরিণ এর মধ্যে কোন শত্র“তা হয় না। এখানে বাঘ একচেটিয়া রাজত্ব করে। বাঘ হরিণকে বক্ষন করে কিন্তু হরিণ বাগকে নয়। এটি হতে হবে বাঘ ও সিংহ। তবে সবচেয়ে বড় শত্র“তা হিসাবে মেডেল দিতে হলে মানব জাতিকে দিতে হবে যদিও তারা একই প্রজাতির।
যাহোক আজ নতুন করে শত্র“তা সৃষ্টি হয়েছে মানুষ ও সূর্য মামার সাথে। মানুষটা সয়ং আমি নিজে। অনেক বড় একটি আশা পূরণের আশায় বের হয়েছি। ইচ্ছেটা শুনলে হয়ত আপনারা আমাকে হিমু সাজার জন্য মরিয়া মনে করবেন। কিন্তু না, আমি শ্রদ্ধেয় প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহম্মেদ এর কাল্পনিক চরিত্রের হিমু সাজার কোন ইচ্ছা আমার নেই। হিমু হতে হলে আমাকে সব কিছু বিসর্যন দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে হবে। তা আমার পক্ষে সম্ভব না, কিছুদিন পর পরিবারের ভার নিতে হবে। যাহোক ইচ্ছেটা হল চার ঘন্টা হাটা। হঠাৎ করে মাথায় আসল।
আমি এখন নোয়াখালি চৌমুহনী। বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে এসেছি, সকালে নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম। বন্ধুদের বলেছিলাম আমাকে সঙ্গ দিতে প্রয়োজনে আট ঘন্টার পারিশ্রমিক দিব। না তাতে ও কাজ হয়নি বরং পাগল, ভন্ড ইত্যাদি কিছু মন্দ গালি শুনতে হল। তবে যা-ই বলুন না কেন, আমাকে পাগল, ভন্ড বলাতে বিন্দু মাত্র রাগ-অভিমান করিনি। পাগল, ভন্ড এরা যেখানে থাকুক না কেন তারা ‘ ঘুরে ফিরে বড় তল’ মানে আগের স্থানে-ই ফিরে আসে। যাহোক আমার স্বপ্নের মাঝে এখন কঠিন প্রতিদ্বন্ধি সূর্য মামা। আমার স্বপ্নটা কোন ভাবে পূরণ করতে দিবেই না। ইতিমধ্যে ঘাম ঝরানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে, বেয়ে পড়ছে… কপাল হতে মুখ যথাক্রমে গলা, বুক। ফিরে যাব? না আমি সূর্য মামাকে হারাব-ই যতই তেজ তার কাছে থাকুক না কেন এ বলে হাটা শুরু করলাম, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ দিয়ে। যতই হাটছি, সূর্য মামা তার সমস্ত শক্তি আমার কায় প্রতস্থাপন করছে। আমি বার বার তার শক্তিকে নিজের সহ্য ক্ষমতা দিয়ে প্রতিহত করছি আর মনের মত করে হাটছি….। যেহেতু একা তাই কিছুটা অস্থির লাগছে।
একি সামনে পুলিশ মশায়রা কি করছে? পুলিশ থাকার তো কথা না। তারা গাড়ি থামাচ্ছে কেন? ও বুঝেছি ভিক্ষা বৃত্তি। যদিও তাদের কাছে এটি ভিক্ষা নয়। ঈদ সামনে তো তাই পকেট গরম করছে। একজন চেয়ারে বসে আছে অন্যরা গড়ি থামিয়ে হাত পেতে বসে আছে। যিনি বসে আছে মনে হয় তিনি মুরব্বি অপ দ্যা পুলিশ। অন্যভাবে ও বলা যেতে পারে যেমন… গড় ফাদার অব ব্যাগার। তিনি বেশ মজা করে ধুমপান করছে। আমার ভয় লাগছে না তার সামনে যেতে, ভয় লাগবে কেন? আমার পরিবারে পুলিশের ছড়াছড়ি। না উনাকে শাস্তি দিতে হবে। হঠাৎ মাথায় একটি বুদ্ধি চাপল….. আমি তার মত করে সিগারেট পান করা শুরু করলাম এবং উনার পাশ দিয়ে যেতে লাগলাম কিন্তু আমাকে ডাকছে না, কিছু বলছে ও না…..বলার জন্য অপেক্ষায় আছি। ধুমপানের স্টাইল পরিবর্তন করলাম। ছোট বেলায় কাগজ দিয়ে সিগারেট বানিয়ে যেমন করে ধুঁয়া নিয়ে খেলা করতাম ঠিক তেমন করে টানতে লাগলাম। হ্যাঁ কাজ হয়েছে। আমাকে পিচ্ছি পুলিশ দিয়ে ডাকানো হয়েছে। বেশ শুনতে পারছি কিন্তু না শুনার মত করে হাটছি…দেরি করার কারনে। যাহোক দ্বিতীয় বারে আমি সাই দিলাম।
পুলিশ: নাম কি?
আদি,
পুলিশ: কোথায় যাচ্ছ?
আদি: আদিকে কাছে পেতে।
পুলিশ: ঠিক বুঝলাম না,
আদি: বুঝবেন না, আমি হাটছি, চার ঘন্টা হাটব বলে বের হয়েছি।
পুলিশ: পাগল নাকি?
আদি: পাগল বলেন আর ভন্ড বলেন তাদের নীতি ঠিক থাকে আপনাদের মত না,
পুলিশ: মানে?
আদি: না বলছিলাম পাগল আর ভন্ড তারা যেখানে যাক না কেন আগের স্থানে ফিরে আসে কিন্তু আপনাদের তো তা সম্ভব না, একেক সময় একেক জায়গায় থাকতে হয়…
পুলিশ: তাই বল, আমি মনে করেছিলাম অন্য কথা,
আদি: অন্য কথা? কি মনে করেছিলেন?
পুলিশ: কিছু না, বদ্ধিজীবিদের মত কথা বলতে শিখেছ দেখছি।
আদি: অন্য নামে ভূষিত করেন, দয়া করে বদ্ধিজীবি নামে না, বদ্ধিজীবিদের কথা শুনলে ভয় লাগে,
পুলিশ: কেন?
আদি: শুনেছি ৭১-এ নাকি সকল বদ্ধিজীবিদের হত্যা করা হয়েছিল যদি তা আবার পূনরাবৃত্তি ঘঠে তাহলে তো আমি তাদের তালিকায় পড়ে যাব।
পুলিশ: যাহোক তুমি পাবলিক এলাকায় ধুমপান করছ কেন? জান না পাবলিক এলাকায় ধুমপান করলে ৫০ টাকা জরিমানা দিতে হয়?
আদি: স্যার জানি, এই নিন ৫০ টাকা, কিন্তু আপনিও একই কাজ করছেন আপনার ৫০ টাকা কাকে দিবেন?
পুলিশ বাবু বেশ সক খেয়ে গেল। আমি অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখেছিলাম। আমার ৫০ টাকা ফেরত দিয়ে গর্জন করা কিছু কথা বলে তাড়িয়ে দিল, হঠাৎ চোখ পুলিশ বাবুর ব্যাচের দিকে গেল…..
পুলিশ: কি দেখছ?
আদি: তেমন কিছু না, আপনার নাম পড়ছি, জানেন স্যার সব পুলিশের যদি আপনার নামের মত দূর্জয় হত তা হল অনেক ভাল হত, কিংবা দূর্লভ ও দেওয়া যায়।
পুলিশ:কেন?
আপনারা তো বিপ্লব ঘঠানোর কাজেই নিয়োজিত।
আদি: স্যার, আপনার নামটা কি জম্মের পরের দেওয়া নাম, নাকি নিজের পছন্দনুযায়ী রাখলেন?
পুলিশ:কি বলতে চাও তুমি?
আদি: স্যার রাগ করবেন না, আমার এক লেংটা কালের বন্ধু আছে, নামটা হলো রবিউল হোসেন জুয়েল, মাধ্যমিক পাসের পর নিজের নাম নিজে পরিবর্তন করে রেখেছে রবি, উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর হোসাইন রবি, অনার্স পাসের পর শ্রাবণ, মাস্টার্স পাসের পর মানে বর্তমান নাম হলো রুদ্র সংক্ষেপে রি। তাই ভাবলাম এরকম কোন নাম কিনা?
পুলিশ:থাপরাইয়া গালের সব দাত ফেলে দিব, বিয়াদব,
আদি: সরি স্যার ক্ষমা করবেন আর এমন হবেনা, তবে স্যার আজও এমন কোন ব্যাক্তি চোখে পড়েনি যে থাপ্পর দিয়ে একটা দাত ফেলেছেন।
পুলিশ:যাবি নাকি, মামার বাড়ি নিয়ে যাব?
আমি আর বিলম্ব না করে নিজের ইচ্ছা পূরণের কাজে লাগলাম।
আমি হাঁটছি আর ভাবছি দূর্জয় কি তার মা বাবর দেওয়া নাম নাকি পূর্নজম্মের না ঠিক বুঝছিনা।